পদার্থের কিছু সাধারণ ধর্ম রয়েছে যা পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই পরিলক্ষিত হয়। এ রকম একটি ধর্ম হলো স্থিতিস্থাপকতা। যেসব পদার্থ প্রবাহিত হয় এদের বলা হয় প্রবাহী পদার্থ বা ফ্লুয়িড। তরল পদার্থ ও গ্যাস হলো ফ্লুয়িড। এ ছাড়া প্রবাহী পদার্থের আরও কিছু ধর্ম আছে, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তরল পদার্থের পৃষ্ঠটান ও সান্দ্রতা। এ অধ্যায়ে আমরা আন্তঃআণবিক আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল, পদার্থের তিন অবস্থা, পদার্থের বন্ধন, স্থিতিস্থাপকতা, পৃষ্ঠটান ও সান্দ্রতা নিয়ে আলোচনা করবো ।
পদার্থ অণু ও পরমাণু দিয়ে গড়া। বিভিন্ন পরমাণুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের জন্য গঠিত হয় অণু আর বিভিন্ন অণুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের জন্য গঠিত হয় পদার্থ। অণুগুলোর পরস্পরের মধ্যে যে বল ক্রিয়া করে তাকে বলা হয় আন্তঃআণবিক বল। এ আন্তঃআণবিক বল সৃষ্টি হয় দুটি শক্তির দরুন- (ক) পারিপার্শ্বিক অণুগুলোর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট বিভব শক্তি।
(খ) অণুগুলোর তাপীয় শক্তি যা প্রকৃতপক্ষে অণুগুলোর গতিশক্তি। এ শক্তি বস্তুর উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল।
অণুগুলোর মধ্যকার দূরত্ব r -এর পরিবর্তনের সাথে আন্তঃআণবিক বলের পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের প্রকৃতি ৭.১ চিত্রে দেখানো হলো। আন্তঃআণবিক দূরত্ব r যত বেশি হবে অর্থাৎ r যত বৃদ্ধি পাবে আন্তঃআণবিক বল তত আকর্ষণধর্মী হবে। আন্তঃআণবিক দূরত্ব r যত কম হবে আন্তঃআণবিক বল তত বিকর্ষণধর্মী হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে ফলে নিট বল শূন্য হয়। এ অবস্থায় r = ro এখানে, ro সাম্যাবস্থায় আন্তঃআণবিক দূরত্ব বা সুস্থিতি দূরত্ব (equilibrium distance)।
আমরা জানি যে, পদার্থ সাধারণত তিন অবস্থায় থাকে— কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থা। আন্তঃআণবিক দূরত্ব ও বল দিয়ে এ অবস্থার বর্ণনা করা যেতে পারে। আমরা জানি যে, যখন আন্তঃআণবিক দূরত্ব r = ro তখন নিট বল শূন্য, তখন অণুগুলো সাম্যাবস্থায় অবস্থান করে। এ সাম্যাবস্থায় অণুগুলো একটি নিয়মিত ত্রিমাত্রিক বিন্যাসে সজ্জিত থাকে যাদের বলা হয় কেলাস। অণু বা আয়নগুলো দ্বারা দখল করা অবস্থানকে বলা হয় ল্যাটিস বিন্দু। সামান্য টেনে অণুগুলোকে যখন এদের পরস্পর থেকে কিছুটা দূরে নেওয়া হয় অর্থাৎ যখন r>ro তখন অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করে। অণুগুলোকে যদি কিছু ঠেলে আরও কাছাকাছি আনা হয় অর্থাৎ যদি r<ro হয়, একটি বিকর্ষণ বল কাজ করে। এভাবে কোনো অণুকে যদি এর সাম্যাবস্থা থেকে সরানো হয় তাহলে এটা এর গড় অবস্থানকে ঘিরে স্পন্দিত হতে থাকবে। কঠিন পদার্থে এরকম অবস্থা থাকে। কঠিন পদার্থে অণুগুলো থাকে প্রায় সাম্যাবস্থার দূরত্বে। স্পন্দনের বিস্তার খুব কম হয় ফলে অণুগুলো এদের অবস্থানে আবদ্ধ থাকে। কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার কেন থাকে তার ব্যাখ্যা এ থেকে পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যায় যে,
১। কঠিন পদার্থে অণুগুলো খুব কাছাকাছি থাকে এবং সুদৃঢ় বিন্যাসে সজ্জিত থাকে।
২। কঠিন পদার্থে অণুগুলো এদের গড় অবস্থানকে ঘিরে স্পন্দিত হয়।
৩। কঠিন পদার্থে অণুগুলোর মধ্যবর্তী বল প্রবল।
৪। কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার আছে।
তরল পদার্থে অণুগুলোর মধ্যবর্তী গড় দূরত্ব কঠিন পদার্থের চেয়ে কিছুটা বেশি। এদের মধ্যে আকর্ষণ বল দুর্বল এবং অণুগুলো মুক্তভাবে তরল পদার্থের সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে পারে। ফলে তরল পদার্থের আকার পরিবর্তিত হয় এবং যে র পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে।
বায়বীয় পদার্থ বা গ্যাসের বেলাতে অণুগুলোর আকৃতির তুলনায় এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুব বেশি অর্থাৎ r>>ro । ফলে আন্তঃআণবিক বল খুব দুর্বল বা নগণ্য। এ পদার্থের অণুগুলো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গতিতে থাকে। অণুগুলোর কোনো নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে না। অণুগুলো পরস্পরের সাথে এবং ধারক পাত্রের দেয়ালের সাথে স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ ঘটায়। সংঘর্ষের সময় ছাড়া অণুগুলোর মধ্যবর্তী বল নগণ্য ।
আমরা জানি যে, সকল পদার্থেরই অণু গঠিত হয় বন্ধন গঠনের মাধ্যমে। মৌল যখন পারমাণবিক অবস্থায় থাকে, তখন তা অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। ফলে এর জন্য বিপুল বিভব শক্তির প্রয়োজন হয়। কিন্তু বন্ধন দ্বারা গঠিত অণুতে পরমাণু স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন এর বিভব শক্তি থাকে খুবই কম। সুতরাং পরমাণুগুলোর সংযোগের ফলে যখন ব্যবস্থার বিভব শক্তি হ্রাস পায় পরমাণুগুলোর মধ্যে তখন বন্ধন বা রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়।
বন্ধন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে; যেমন-
১। আয়নিক বন্ধন (Ionic Bond),
২। সমযোজী বন্ধন (Covalent Bond),
৩। ধাতব বন্ধন (Metallic Bond) এবং
৪। ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন (Vander Waals Bond) আয়নিক বন্ধন
আমরা জানি যে, কোনো কঠিন পদার্থে অণু বা আয়নগুলো যে অবস্থান দখল করে থাকে, তাকে বলা হয় ল্যাটিস বিন্দু। আয়নিক বন্ধনে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন ল্যাটিস বিন্দু দখল করে থাকে। এসব আয়নের মধ্যকার স্থির তড়িৎ আকর্ষণ আয়নিক বা তড়িৎযোজী বন্ধন তৈরি করে। এ আকর্ষণ বল খুবই প্রবল। সুতরাং এ বন্ধনে তৈরি পদার্থ খুবই শক্ত এবং এদের গলনাঙ্কও বেশ বেশি। এসব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতা খুব কম। আয়নিক বন্ধন দ্বারা যে পদার্থ তৈরি হয় তাদের বলা হয় আয়নিক কঠিন পদার্থ। আয়নিক বন্ধন কখনো দুটি অধাতু পরমাণু বা দুটি ধাতু পরমাণুর মধ্যে গঠিত হয় না। দুটি বিপরীতধর্মী মৌল যেমন- ধাতু ও অধাতুর মধ্যে সৃষ্ট আয়নিক বন্ধন দ্বারা যৌগ গঠিত হয়। এ ধরনের যৌগ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড । সোডিয়াম ও ক্লোরিনের পরমাণু সমন্বয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড গঠিত হয়। ৭.২ চিত্রে সোডিয়াম ক্লোরাডের আয়নিক বন্ধন দেখানো হয়েছে।
একই বা ভিন্ন দুটি অধাতুর পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। পারিপার্শ্বিক পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে ইলেকট্রন শেয়ার করে এই বন্ধন তৈরি করে। এ রকম সমযোজী বন্ধন কোনো স্থানে বিস্তৃত হয়ে কঠিন পদার্থের বৃহৎ কাঠামো তৈরি করে। সিলিকন ইত্যাদি সমযোজী কঠিন পদার্থের উদাহরণ। হীরক গঠনে প্রতিটি কার্বন পরমাণু পারিপার্শ্বিক চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরি করে । এরা যথেষ্ট শক্ত, উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট এবং তড়িৎ কুপরিবাহী। ৭.৩ চিত্রে জার্মেনিয়ামের সমযোজী বন্ধন দেখানো হয়েছে।
পরমাণুতে একটিমাত্র ইলেকট্রন থাকায় হাইড্রোজেন পরমাণু সাধারণ সমযোজী বন্ধনে অংশ নিয়ে থাকে। দুটো হাইড্রোজেন পরমাণু একটি করে ইলেকট্রন প্রদান করে একটি ইলেকট্রন যুগল সমযোজী বন্ধন গঠনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন অণুর সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত যৌগ তড়িৎ দ্বিমেরুর ন্যায় আচরণ করে। এরকম কয়েকটি দ্বিমেরু স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণের ফলে এরা বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এসব দ্বিমেরু বন্ধনে হাইড্রোজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা খুব কম হওয়ায় ধনাত্মক প্রান্ত হিসেবে কাজ করে। যখন এরূপ দ্বিমেরুসমূহ পরস্পরের কাছে আসে তখন একটি অণুর হাইড্রোজেন প্রান্ত অন্য অণুর ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে বিশেষভাবে আকর্ষিত হয়ে বন্ধন গঠন করে। স্থির তড়িতের মধ্যকার কুলম্ব বলের কারণে সৃষ্ট এ বন্ধনকে হাইড্রোজেন বন্ধন বলে ।
হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, অ্যামোনিয়াম ফ্লোরাইড, বরফ (H2O) ইত্যাদি হাইড্রাজেন বন্ধন কেলাসের উদাহরণ। সমযোজী অণুর সমযোজী বন্ধন অপেক্ষা হাইড্রোজেন বন্ধন অনেক দুর্বল তাই একে সত্যিকার অর্থে রাসায়নিক বন্ধন বলা যায় না।
কোনো ধাতুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল পরমাণুগুলোকে পরস্পরের সাথে আটকে রাখে তাকে ধাতব বন্ধন বলা হয়। ধাতুতে ল্যাটিস বিন্দুতে ধনাত্মক আয়ন থাকে। এ আয়ন উপাদানিক পরমাণু থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে আলাদা করে তৈরি হয়। এসব ইলেকট্রন অত্যন্ত সচল এবং ধাতব কঠিন পদার্থের সর্বত্র গ্যাসের অণুর মতো ঘুরে বেড়ায়। এ ইলেকট্রনগুলো কোনো পরমাণুর থাকে না বরং সমগ্র বস্তুখণ্ডের অংশ হয়ে যায়। ধাতুতে পরমাণুগুলো ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক আধানে আহিত আয়নে রূপান্তরিত হয় এবং একটি ত্রিমাত্রিক ল্যাটিসে বিন্যস্ত হয়। এ যেন ইলেকট্রনের সমুদ্রে ডুবন্ত ধাতব আয়ন । মুক্ত ইলেকট্রন থাকার কারণে ধাতু তড়িৎ সুপরিবাহী। ৭.৪ চিত্রে সোডিয়ামের ধাতব বন্ধন দেখানো হয়েছে।
এ বন্ধন দ্বারা আণবিক কঠিন পদার্থ তৈরি হয়। পরমাণুগুলোর মধ্যে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে এ ধরনের কঠিন পদার্থ তৈরি হয়। অণুগুলোর মধ্যে বন্ধন নির্ভর করে অণুগুলো পোলার (Polar) বা অ-পোলার (non-polar) কিনা তার উপর। কোনো অণুর ঋণাত্মক আধানের কেন্দ্র যদি ধনাত্মক আধানের সাথে সমাপতিত হয় তাহলে অণুটিকে বলা হয় অ- পোলার। সকল নিষ্ক্রয় গ্যাস, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের অক্সিজেন অণুগুলো এ ধরনের অণু। অন্যথায়, অণুটিকে বলা হয় পোলার অণু। পানি, অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই অক্সাইডের অণু হলো পোলার অণু। পোলার অণুগুলোর মধ্যকার বন্ধনকে বলা হয় দ্বিপোল-দ্বিপোল বন্ধন। অ-পোলার অণুগুলোর মধ্যকার বন্ধনকে বলা হয় ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন। ৭.৫ চিত্রে আর্গন কেলাসের ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন দেখানো হয়েছে। যে বল ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন সৃষ্টি করে তাকে ভ্যানডার ওয়ালস বলও বলা হয়।
আণবিক কঠিন পদার্থ সাধারণত নরম এবং নিম্ন গলনাঙ্কবিশিষ্ট হয়। এরা তড়িৎ কুপরিবাহী।
এরকম ঘটছে কারণ কোনো বস্তুর উপর বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করলে যদি বস্তুটি গতিশীল না হয় তাহলে এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে আপেক্ষিক সরণ হয় বা বলা যেতে পারে অণুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে, ফলে বস্তুটির আকার বা আয়তন বা উভয়ের পরিবর্তন হয়। এ অবস্থায় বস্তুর ভেতরের আন্তঃআণবিক বল এ পরিবর্তনকে বাধা দিতে চেষ্টা করে। ফলে বল প্রয়োগ বন্ধ করলে বস্তু আবার আগের অবস্থা ফিরে পায়। পদার্থের এ ধর্মের নাম স্থিতিস্থাপকতা।
যে বস্তুর বাধা দেওয়ার ক্ষমতা বেশি তার স্থিতিস্থাপকতাও বেশি হবে। লোহা ও রবারের মধ্যে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা লোহার বেশি তাই লোহা রবারের চেয়ে বেশি স্থিতিস্থাপক।
বাহ্যিক বল অপসারিত হলে যদি বিকৃত বস্তু ঠিক আগের আকার ও আয়তন ফিরে পায় তাহলে ঐ বস্তুকে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু বলে।
বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা গুণের জন্য বাহ্যিক বল অপসারিত হলে বিকৃত বস্তু ঠিক আগের আকার বা আয়তন ফিরে পায়। কিন্তু বস্তুর এ আকার বা আয়তন পুনঃপ্রাপ্তির ক্ষমতা অসীম নয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রত্যেক বস্তুই বাহ্যিক বলের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তুর ন্যায় আচরণ করে। এই সীমাকে স্থিতিস্থাপক সীমা বলা হয় ।
কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল প্রয়োগ করে তাকে বিকৃত করলে যদি বল অপসারণের পর বস্তুটি ঐ বিকৃত অবস্থা পুরোপুরি বজায় রাখে তাহলে বস্তুটিকে নমনীয় বা পূর্ণ প্লাস্টিক বস্তু বলা হয় ।
বাইরে থেকে যেকোনো পরিমাণ বল প্রয়োগের ফলে কোনো বস্তুর যদি আকারের কোনো পরিবর্তন না ঘটে তাহলে বস্তুটিকে পূর্ণ দৃঢ় বস্তু বলা হয়। পূর্ণ দৃঢ় বস্তু বাস্তবে পাওয়া যায় না।
কোনো বস্তু যদি পূর্ণ দৃঢ় না হয় তাহলে বাইরে থেকে বল প্রয়োগের ফলে বস্তুটির বিভিন্ন অংশের মধ্যে আপেক্ষিক সরণ হয়; ফলে বস্তুটির আকার বা আয়তনের পরিবর্তন হয়। বস্তুর এ অবস্থাকে রূপবিকৃতি (Deformation) বলে এবং বস্তুটি বিকৃত হয়েছে বলা হয়। আনুপাতিক রূপবিকৃতি বা রূপবিকৃতির হারকে বিকৃতি বলে।
ব্যাখ্যা, : কোনো বস্তুর আদিমাত্রা A এবং বল প্রয়োগের ফলে মাত্রা B হলে মাত্রার পরিবর্তন হবে BA
সুতরাং বিকৃতি
বিকৃতি একটি স্কেলার রাশি।
মাত্রা ও একক : যেহেতু বিকৃতি একই প্রকার দুটি রাশির অনুপাত তাই এর কোনো মাত্রা ও একক নেই।
কোনো বস্তুর বিকৃতি 0.002 বলতে বোঝায় বস্তুর একক মাত্রার পরিবর্তন হয়েছে 0.002 একক ।
কোনো বস্তুকে বিকৃত করা হলে এই বিকৃতি প্রতিরোধ করার জন্য বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা ধর্মের জন্য বস্তুর ভেতর একটি প্রতিরোধ বলের উদ্ভব হয়। এই বল বস্তুকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চায়। একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে যে প্রতিরোধ বলের উদ্ভব হয় তাই হচ্ছে পীড়ন।
ব্যাখ্যা : যেহেতু প্রযুক্ত বল ও প্রতিরোধকারী বল পরস্পর সমান সেজন্য প্রযুক্ত বল দ্বারাই প্রতিরোধকারী বলের পরিমাপ করা হয়। অতএব পীড়নের মান হচ্ছে একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বিকৃতি সৃষ্টিকারী বলের মানের সমান। অর্থাৎ,
পীড়ন = প্রতিরোধকারী বল/ক্ষেত্রফল= প্রযুক্ত বল/ক্ষেত্রফল
A ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো বস্তুতে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হলে,
পীড়ন =
পীড়ন একটি স্কেলার রাশি।
মাত্রা ও একক : পীড়নের মাত্রা হবে,
পীড়ন=বল/ক্ষেত্রফল এর মাত্রা অর্থাৎ ML-1T-2
তাৎপর্য :কোনো বস্তুর পীড়ন 5 x 105 N m-2 বলতে বোঝায় বস্তুর প্রতি 1 m2 ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে বিকৃতি প্রতিরোধকারী বলের মান 5 x 105 N
বিকৃতি সৃষ্টি করতে প্রতি 1 m2 ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের মানও তাই ।
স্থিতিস্থাপক সীমার বাইরে বল প্রয়োগ করা হলে বল অপসারণ করার পর বস্তুটি আর পূর্বাবস্থায় সম্পূর্ণ ফিরে আসে না। প্রযুক্ত বলের মান আরো বেশি হলে বস্তুটি ছিঁড়ে বা ভেঙে যায়। সবচেয়ে কম যে বল প্রয়োগ করলে বস্তুটি ছিঁড়ে বা ভেঙে যায় তাকে অসহ বল বলে। অসহ বলকে অসহ ভার বা ওজনও বলা হয়।
অসহ পীড়ন : অসহ বলের জন্য যে পীড়ন হয় তাই অসহ পীড়ন ।
সংজ্ঞা : প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত সর্বাপেক্ষা কম যে বলের ক্রিয়ায় কোনো বস্তু ছিঁড়ে বা ভেঙে যায় তাকে অসহ পীড়ন বলে ।
অসহ পীড়ন = অসহ বল/ক্ষেত্রফল (7.3)
তাৎপর্য : তামার অসহ পীড়ন 3.5 x 10-8 Nm-2 বলতে বোঝায় তামার তৈরি কোনো বস্তুর প্রতি বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের উপর ন্যূনতম 3.5 x 108 N বল লম্বভাবে প্রয়োগ করলে বস্তুটি ছিড়ে বা ভেঙে যাবে।
পদার্থের আণবিক গড়ন বিবেচনা করলে এর স্থিতিস্থাপক ধর্ম সহজে বোঝা যায়। আমরা জানি যে, সকল পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক বল ক্রিয়া করে। কঠিন পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে ক্রিয়াশীল এ বলকে সংসক্তি বল (cohesive force) বলে । এটা জানা গেছে যে, স্বাভাবিক অবস্থায় কেলাসের অণুগুলো নিম্নতম বিভব শক্তি অবস্থানে অবস্থান করে থাকে। এ অবস্থা এদের সাম্যাবস্থা। এরকম অবস্থানে কোনো অণুর উপর ক্রিয়াশীল নিট আন্তঃআণবিক বল শূন্য। অণুগুলোর মধ্যকার দূরত্ব পরিবর্তনের সাথে আন্তঃআণবিক বলের পরিবর্তন ঘটে।
আণবিক দূরত্ব যত বেশি হবে, আন্তঃআণবিক বল তত বেশি আকর্ষণধর্মী হবে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব যত কম হবে আন্তঃআণবিক বল তত বেশি বিকর্ষণধর্মী হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে ফলে নিট বল হয় শূন্য ।
কোনো বস্তুতে দৈর্ঘ্য বা টান পীড়ন প্রয়োগ করা হলে অণুগুলোর মধ্যবর্তী আন্তঃআণবিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায় ফলে অণুগুলো আকর্ষণ বল অনুভব করে বা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হয়। বহিস্থ বল সরিয়ে নিলে আকর্ষণ বলের প্রভাবে অণুগুলো তাদের সাম্যাবস্থানে ফিরে আসে। অপরদিকে দেখা যায় যে, বহিস্থ বল প্রয়োগে কোনো বস্তুকে যদি সঙ্কুচিত করা হয় তাহলে আন্তঃআণবিক দূরত্ব হ্রাস পায় ফলে তাদের মধ্যে বিকর্ষণ বলের উদ্ভব ঘটে। বহিস্থ বল সরিয়ে নিলে বিকর্ষণ বল অণুগুলোকে পুনরায় তাদের সাম্যাবস্থায় ফিরিয়ে আনে। কোনো নির্দিষ্ট টান বলের জন্য কোনো স্বতন্ত্র অণুর কী পরিমাণ সরণ ঘটবে তা আন্তঃআণবিক বলের সবলতার উপর নির্ভর করে। আন্তঃআণবিক বল যত বেশি সবল হবে অণুগুলোর সরণ তত কম হবে। এ রকম অবস্থায় কোনো নির্দিষ্ট পীড়নের দরুন আনুষঙ্গিক বিকৃতি কম হবে বলে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মান বেশি হবে ।
আমরা ৭.৪ অনুচ্ছেদে বিকৃতি ও পীড়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । পরিবর্তনের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বিকৃতি ও পীড়ন তিন রকমের হতে পারে।
(ক) দৈর্ঘ্য বা টান বিকৃতি ও দৈর্ঘ্য বা টান পীড়ন (Longitudinal or Tensile Strain and Longitudinal or Tensile Stress)
দৈর্ঘ্য বিকৃতি : কোনো বস্তুর উপর বাইরে থেকে বল প্রয়োগের ফলে যদি এর দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে তাহলে একক দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনকে দৈর্ঘ্য বিকৃতি বলে।
ব্যাখ্যা : L দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তুর উপর দৈর্ঘ্য বরাবর বল প্রয়োগ করলে যদি এর দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন । হয় (চিত্র : ৭-৬),
তাহলে দৈর্ঘ্য বিকৃতি =
ব্যাখ্যা : দৈর্ঘ্য বিকৃতি ঘটাতে যদি কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর A প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের উপর F বল লম্বভাবে প্রয়োগ করতে হয়, তাহলে দৈর্ঘ্য পীড়ন =
তারের নিচের প্রান্তে যদি M ভরের বস্তু ঝুলিয়ে বল প্রয়োগ করা হয়, তাহলে F = Mg এবং তারের ব্যাসার্ধ r হলে A =πr2
সুতরাং দৈর্ঘ্য পীড়ন = =... ... (7.5)
রবার্ট হুক পরীক্ষার সাহায্যে দেখান যে, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর বিকৃতি প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। পরীক্ষালব্ধ এ ফলকে রবার্ট হুক সূত্রের আকারে উপস্থাপিত করেন।১
বিবৃতি : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর পীড়ন এর বিকৃতির সমানুপাতিক ।
অর্থাৎ পীড়ন বিকৃতি ।
বা, পীড়ন = ধ্রুবক x বিকৃতি
বা, পীড়ন /বিকৃতি = ধ্রুবক
এ ধ্রুবকের মান বস্তুর উপাদান এবং এককের পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। একে বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বা মানাঙ্ক (modulus of elasticity) বা স্থিতিস্থাপক ধ্রুবক ( elastic constant) বলে।
কোনো বস্তুতে বল প্রয়োগ করলে তার বিকৃতি ঘটে। বল স্থিতিস্থাপক সীমা অতিক্রম না করলে হুকের সূত্রানুসারে কোনো বস্তুর বিকৃতি যত বেশি হবে, পীড়নও তত বেশি হবে। অর্থাৎ বিকৃতি প্রতিরোধকারী বলের মানও তত বেশি হবে। যেহেতু পীড়ন একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে প্রযুক্ত বল দ্বারা পরিমাপ করা হয়। সুতরাং বলা যায়, একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বল যত বেশি হবে বস্তুটি তত বেশি বিকৃত হবে অর্থাৎ তার দৈর্ঘ্য, আয়তন বা আকার তত বেশি পরিবর্তিত হবে। একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বল দ্বিগুণ করলে বিকৃতি দ্বিগুণ হবে, একক ক্ষেত্রফলে প্রযুক্ত বল তিনগুণ করলে বিকৃতিও তিনগুণ হবে।
এ লেখচিত্র থেকে যেকোনো প্রসারণশীল তারের আচরণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। একটি তারের একপ্রান্ত একটি দৃঢ় অবলম্বনে আটকে অপর প্রান্তে কিছু ওজন ঝুলিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, ওজনের পরিমাণ বাড়ালে তারের দৈর্ঘ্যও বেড়ে যায়। বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের উপর ক্রিয়াশীল বল হচ্ছে পীড়ন। বলের ক্রিয়ায় বস্তুর একক মাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে বিকৃতি। এখন পীড়ন ও বিকৃতির লেখচিত্র অঙ্কন করলে ৭.১০ চিত্রের মতো একটি রেখা পাওয়া যাবে।
লেখচিত্রটি O থেকে P বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখা, অর্থাৎ P বিন্দু পর্যন্ত তারের পীড়ন বিকৃতির সমানুপাতিক অর্থাৎ তারটি হুকের সূত্র মেনে চলে। ঐ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যে যেকোনো অবস্থান থেকে ভার সরিয়ে নিলে বস্তুটি তার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং ঐ বিন্দুদ্বয়ের মধ্যে বস্তু পূর্ণ স্থিতিস্থাপকরূপে আচরণ করে এবং P বিন্দু বস্তুর স্থিতিস্থাপক সীমা নির্দেশ করে।
স্থিতিস্থাপক সীমা অতিক্রম করে ভার চাপালে দেখা যাবে লেখ নিচের দিকে বাঁক নিচ্ছে। এ সময়ে যেকোনো মুহূর্তে (চিত্রে Q বিন্দু) ভার অপসারণ করে নিলেও তারটি আর আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। তখন ভার-সম্প্রসারণ চিত্রে QT হয়। অর্থাৎ তারে একটি স্থায়ী বিকৃতি OT থেকে যায়। ভার আরো বৃদ্ধি করলে ভার-সম্প্রসারণ লেখ অনিয়মিতভাবে ওঠা-নামা করে এবং তারের কোনো কোনো জায়গা সরু হয়ে পড়ে। R পর্যন্ত এরকম চলে। R বিন্দুকে নতি বিন্দু (yeild point) বলে। এরপর ভার আরো বাড়ালে তারের বিভিন্ন জায়গা আরো সরু হতে থাকে এবং কোনো এক জায়গা থেকে তার ছিঁড়ে যায় (চিত্রে S বিন্দু)। S বিন্দুকে সহন সীমা বলে। প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ন্যূনতম যে বল লম্বভাবে প্রযুক্ত হলে তারটি ছিঁড়ে যায় তাকে ঐ তারের অসহ পীড়ন বলে। কোনো তারের অসহ পীড়নকে তারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল দিয়ে গুণ করলে অসহ ভার বা অসহ বল পাওয়া যায়।
তখন অসহ ভারের চেয়ে কম ভারে এমনকি স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যেই তারটি ছিঁড়ে যেতে পারে।
হুকের সূত্র থেকে আমরা পাই, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোনো বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা। এ ধ্রুবকই বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক ।
:- স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক, E=পীড়ন /বিকৃতি
রাশি : পীড়ন ও বিকৃতি স্কেলার রাশি বলে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক একটি স্কেলার রাশি।
মাত্রা : যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের মাত্রা হবে পীড়নের মাত্রা
অর্থাৎ বল/ক্ষেত্রফল এর মাত্রা অর্থাৎ ML-1T-2
একক : যেহেতু বিকৃতির কোনো একক নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক হবে পীড়নের একক অর্থাৎ, Nm-2বা, Pa
বিকৃতি ও পীড়নের বিভিন্নতার জন্য স্থিতিস্থাপকতার গুণাঙ্ক বিভিন্ন রকমের হয় ।
একে Y দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
ইয়ং গুণাঙ্ক, Y = দৈর্ঘ্য পীড়ন/দৈর্ঘ বিকৃতি
এ প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও L দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি তার কোনো দৃঢ় অবলম্বন থেকে ঝুলিয়ে (চিত্র : ৭.১১) যদি তারটির নিচের প্রান্তে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে তারের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি / হলে,
দৈর্ঘ্য বিকৃতি = দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি/আদি দৈর্ঘ্য =
এবং দৈর্ঘ্য পীড়ন =
সুতরাং Y = ... …. (7.8)
যদি তারের নিচের প্রান্তে M ভর ঝুলানো হয় তাহলে, F = Mg, এখানে g = অভিকর্ষজ ত্বরণ। আবার তারটির ব্যাসার্ধ যদি r হয় তাহলে A = πr2 সেক্ষেত্রে, r
.. ... (7.9)
যদি A =1 একক এবং l = L হয়, তবে (7.8) সমীকরণ অনুসারে F = Y হয়।
সুতরাং একক প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট কোনো তারের দৈর্ঘ্য বরাবর যে বল প্রয়োগ করলে দৈর্ঘ্য বিকৃতি একক হয় অর্থাৎ তারটির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হয় তাই ইয়ং গুণাঙ্ক ।
যেহেতু বিকৃতির কোনো মাত্রা নেই, সুতরাং Y-এর মাত্রা পীড়নের মাত্রার অনুরূপ হবে অর্থাৎ ML-1T-2 এবং এসআই পদ্ধতিতে এর একক Nm-2 or Pa
ইস্পাতের ইয়ং গুণাঙ্ক 2 x 1011 Nm-2 বলতে বোঝায় 1 m2 প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট ইস্পাতের দণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর 3 x 1011 N বল প্রয়োগ করা হলে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি আদি দৈর্ঘ্যের সমান হবে।
দৃঢ়তার গুণাঙ্ককে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে স্পর্শক বরাবর বল প্রয়োগ করার ফলে যদি ব্যবর্তন কোণ ও উৎপন্ন হয় এবং ঐ পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় (চিত্র : ৭.৯) তাহলে
দৃঢ়তার গুণাঙ্ক, n = ব্যবর্তন পীড়ন/ব্যবর্তন বিকৃতি =
বা, n =
এখন, = 1 একক এবং A = 1 একক হলে, F = n হয়
অর্থাৎ 1 রেডিয়ান ব্যবর্তন কোণ সৃষ্টি করতে বস্তুর পৃষ্ঠের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর যতটা স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হয় তাই ঐ বস্তুর দৃঢ়তার গুণাঙ্ক ।
যেহেতু শুধু কঠিন পদার্থেরই নির্দিষ্ট আকার থাকে, সেজন্য দৃঢ়তার গুণাঙ্ক শুধু কঠিন পদার্থেরই বৈশিষ্ট্য।
দৃঢ়তার গুণাঙ্কের মাত্রা ও একক ইয়ং-এর গুণাঙ্কে মাত্রা ও এককের অনুরূপ।
অ্যালুমিনিয়ামের দৃঢ়তার গুণাঙ্ক 2.6 x 1010 Nm-2 বলতে আমরা বুঝি যে, একটি অ্যালুমিনিয়ামের ঘনকের আকৃতি পরিবর্তন করে। রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন করতে ঐ ঘনকের পৃষ্ঠের প্রতি একক বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের ওপর 2.6 x 1010 N স্পর্শকীয় বল প্রয়োগ করতে হবে।
আয়তন গুণাঙ্ককে B দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আয়তন গুণাঙ্ক, B= আয়তন পীড়ন/আয়তন বিকৃতি
মান : যদি V আয়তনের কোনো বস্তুর উপর চার দিক থেকে লম্বভাবে F বল প্রয়োগ করা হয় (চিত্র ৭.৭ ) এবং তাতে যদি বস্তুর আয়তন হ্রাস পায়, তাহলে আয়তন বিকৃতি = v/V। যদি বস্তুটির পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল A হয় তাহলে
আয়তন পীড়ন = F/A=
সুতরাং B =
কঠিন, তরল বা গ্যাস সবারই আয়তন থাকায় আয়তন গুণাঙ্ক পদার্থের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
পারদের আয়তন গুণাঙ্ক 2.8 x 1010 Nm-2 বলতে বোঝায় যে পারদের একক আয়তন বিকৃতি সৃষ্টি করতে এর প্রতি 1 m2 ক্ষেত্রফলের ওপর 2.8 x 1010 N বল প্রয়োগ করতে হয়।
সংনম্যতা (Compressibility) : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে আয়তন বিকৃতি ও আয়তন পীড়নের অনুপাতকে সংনম্যতা বলে।
অর্থাৎ, সংনম্যতা = আয়তন বিকৃতি /আয়তন পীড়ন
অর্থাৎ সংনম্যতা হচ্ছে আয়তন গুণাঙ্কের বিপরীত রাশি। আয়তন গুণাঙ্ককে তাই কখনো কখনো অসংনম্যতা (incompressibility) বলা হয়।
যখন কোনো তারে দৈর্ঘ্য বরাবর বল প্রয়োগ করা হয় তখন তারের দৈর্ঘ্য কিছুটা বেড়ে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তারের ব্যাস কিছু কমে যায় বা তার সরু হয়ে যায় (চিত্র : ৭.১২)। প্রস্থের দিকে যে বিকৃতি হয় তাকে পার্শ্ব বিকৃতি বলে। কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য বিকৃতি ঘটলে পার্শ্ব বিকৃতিও ঘটে। বৈজ্ঞানিক সাইমন পয়সন দেখান যে, স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে পার্শ্ব বিকৃতি দৈর্ঘ্য বিকৃতির সমানুপাতিক।
পয়সনের অনুপাত, =পার্শ্ব বিকৃতি/ দৈর্ঘ্য বিকৃতি
বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট কোনো তারের দৈর্ঘ্য L ও ব্যাস D হলে এবং বাহ্যিক বলের প্রভাবে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি l হলে ও ব্যাস d পরিমাণ কমে গেলে,
দৈর্ঘ্য বিকৃতি = I/L এবং পার্শ্ব বিকৃতি = d/D
ব্যাসের পরিবর্তে ব্যাসার্ধ দিয়েও পয়সনের অনুপাতকে প্রকাশ করা যেতে পারে।
(7.13)
.. পয়সনের অনুপাত
ধরা যাক, তারের আদি দৈর্ঘ্য L এবং ব্যাসার্ধ r। বাহ্যিক বলের প্রভাবে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি L এবং ব্যাসার্ধের হ্রাস হলে
দৈর্ঘ্য বিকৃতি =
পার্শ্ব বিকৃতি =
এখানে ঋণাত্মক চিহ্ন দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, L ধনাত্মক হলে r ঋণাত্মক হবে এবং L ঋণাত্মক হলে r ধনাত্মক হবে। অর্থাৎ বল প্রয়োগে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেলে ব্যাসার্ধ হ্রাস পাবে আর দৈর্ঘ্য হ্রাস পেলে ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পাবে।
বিকৃতি একই জাতীয় দুটি রাশির অনুপাত বলে বিকৃতির মাত্রা ও একক নেই । পয়সনের অনুপাত দুটি বিকৃতির অনুপাত বলে পয়সনের অনুপাতের কোনো মাত্রা ও একক নেই।
অ্যালুমিনিয়ামের পয়সনের অনুপাত 0.35 বলতে বোঝায় অ্যালুমিনিয়ামের দৈর্ঘ্য বরাবর স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বল প্রয়োগ করলে পার্শ্ব বিকৃতি ও দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাত সব সময় 0.35 হয়। তাত্ত্বিকভাবে দেখানো যায় যে, পয়সনের অনুপাতের মান -1 এর চেয়ে কম এবং + এর চেয়ে বেশি হতে পারে না, অর্থাৎ । বাস্তবে পয়সনের অনুপাত কেবলমাত্র তখনই ঋণাত্মক হওয়া সম্ভব যখন দৈর্ঘ্য প্রসারণের ফলে বস্তুর ব্যাস বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ পার্শ্বীয় প্রসারণ ঘটে। কিন্তু বাস্তবে তা অসম্ভব তাই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পয়সনের অনুপাতের মান ঋণাত্মক হওয়া সম্ভব নয়। বেশির ভাগ ধাতব পদার্থের ক্ষেত্রে এ মান সাধারণত 0.3 হয়ে থাকে। ধাতব পদার্থের ক্ষেত্রে তাই পয়সনের অনুপাতের সীমা ধরা হয়
এক টুকরো রবারের ফিতে টানলে সহজেই বেড়ে যায়, কিন্তু একটি ইস্পাতের তার টানলে তা সহজে বাড়ে না। একই প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল ও দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট দুটি ভিন্ন বস্তুর মধ্যে যে বস্তুতে যত বেশি প্রতিরোধ বলের সৃষ্টি হয় সেই বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা তত বেশি। প্রতিরোধ বল প্রযুক্ত বলের সমান বলে নির্দিষ্ট বিকৃতি সৃষ্টি করতে যে বস্তুতে যত বেশি বল প্রয়োগ করতে হয় তাকে তত বেশি স্থিতিস্থাপক বলা হয়। এ হিসাবে দেখা যায় যে, একই দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট রবার ও ইস্পাতের তারে সমান দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করতে রবারের তুলনায় ইস্পাতের তারে বল প্রয়োগ করতে হয় অনেক বেশি। এজন্য রবারের তুলনায় ইস্পাতের স্থিতিস্থাপকতা অনেক বেশি।
যে সকল পদার্থ প্রবাহিত হয় তাদের প্রবাহী পদার্থ বা ফ্লুয়িড (fluid) বলে। তরল পদার্থ ও গ্যাসকে একত্রে বলা হয় প্ৰবাহী।
মনে করা যাক, ABC পথ বরাবর কোনো তরল পদার্থ প্রবাহিত হচ্ছে (চিত্র : ৭.১৫ক)। ধরা যাক যে, তরল পদার্থের কোনো কণা , এবং বেগ নিয়ে যথাক্রমে A, B ও C বিন্দু অতিক্রম করছে। প্রবাহটি যদি ধারারেখ হয় তাহলে কোনো নতুন কণা A বিন্দুতে পৌঁছালে এর বেগ ,এর সমান হবে। এ বেগের অভিমুখ হবে A বিন্দুতে অঙ্কিত ABC পথের স্পর্শকের অভিমুখে। কোনো কণা B তে পৌঁছালে এর বেগ হবে । এই বেগ , এর সমান হতে পারে আবার নাও হতে পারে। একইভাবে C বিন্দু অতিক্রমকারী সকল কণার বেগ হবে ।
ধারারেখ প্রবাহের বেলায় কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু অতিক্রমকারী সকল কণার ঐ বিন্দুতে বেগ একই বা সমান থাকে। কিন্তু কণাগুলোর বেগ এদের পথের বিভিন্ন বিন্দুতে পৃথক হতে পারে আবার নাও হতে পারে। ধারারেখ হলে গতিপথের যেকোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক ঐ বিন্দুতে তরলের প্রবাহের অভিমুখ বা দিক নির্দেশ করে। ধারারেখা সরল বা বক্র হতে পারে।
এটা দেখা গেছে যে, কোনো তরল পদার্থ ধারারেখ প্রবাহে প্রবাহিত হয় যদি এর বেগ ক্রান্তি বেগ নামক একটি সীমান্তিক বেগের চেয়ে কম হয়। কোনো তরল পদার্থের বেগ যদি এর ক্রান্তি বেগের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তরল পদার্থের কণার পথ ও বেগ প্রতিনিয়ত এলোমেলোভাবে পরিবর্তিত হয় ফলে কণাগুলো আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়। এতে প্রবাহী এর সকল নিয়মানুবর্তিতা হারিয়ে ফেলে। এ ধরনের প্রবাহকে বিক্ষিপ্ত বা অনিয়ত বা অশান্ত প্রবাহ বলে (চিত্র: ৭.১৫খ)। এ ধরনের গতিতে যেকোনো বিন্দুতে তরল পদার্থের কণার বেগের মান ও দিক উভয়ই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়।
অধ্যাপক অসবর্ন রেনল্ডস (Prof. Osborne Reynolds) সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন যে, কোনো তরলের ক্রান্তিবেগ নির্ভর করে তরলের সান্দ্রতাঙ্ক (1). তরলের ঘনত্ব (p) এবং যে নল দিয়ে তরল প্রবাহিত হচ্ছে তার ব্যাসার্ধের (r) উপর। তিনি হিসাব করে দেখান যে,
ক্রান্তিবেগ,
এখানে, R = রেনল্ডস-এর সংখ্যা = একটি ধ্রুবক। এই ধ্রুবকের মানের উপর নির্ভর করে তরলের প্রবাহ ধারারেখ প্রবাহ হবে না বিক্ষিপ্ত প্রবাহ হবে। Re <2000 হলে অর্থাৎ রেনল্ডস-এর সংখ্যা 2000-এর কম হলে তরল প্রবাহ ধারা রেখ প্রবাহ হবে। আর Re এর মান 2000 থেকে 3000 এর মধ্যে হলে বুঝতে হবে তরল প্রবাহ ধারারেখ থেকে বিক্ষিপ্ত প্রবাহে রূপান্তরিত হচ্ছে। Re এর মান 3000 এর উপরে হলে প্রবাহ পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত প্রবাহে পরিণত হবে।
আমরা জানি, যে সকল পদার্থ প্রবাহিত হয় তাদের প্রবাহী পদার্থ বলে। কোনো প্রবাহী প্রবাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে কেমন বাধাগ্রস্ত বা রোধী (resistive) তার পরিমাপই হলো ঐ পদার্থের সান্দ্রতা। প্রবাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে মধু পানির চেয়ে বেশি রোধী তাই মধু পানির তুলনায় অধিক সান্দ্র । প্রবাহীর সান্দ্রতা দুটি কঠিন পদার্থের মধ্যবর্তী ঘর্ষণের সদৃশ। প্রবাহীর নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। কারণ তাদের আস্তঃআণবিক বল খুবই নগণ্য। কোনো অনুভূমিক তলের উপর দিয়ে প্রবাহিত কোনো প্রবাহীকে কতগুলো স্তরে স্তরে বিভক্ত বলে কল্পনা করলে তল সংলগ্ন স্তরটি তলের সাপেক্ষে স্থির থাকে বাকি স্তরগুলো থাকে গতিশীল। তল থেকে যে স্তরের দূরত্ব যত বেশি সে স্তরের আপেক্ষিক বেগ তত বেশি।
প্রবাহের সময় প্রবাহীর একটি স্তর এর সন্নিহিত স্তরের সাথে ঘর্ষণের সৃষ্টি করে এবং ঐ স্তরের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়। তাতে বিভিন্ন স্তর বিভিন্ন বেগে প্রবাহিত হয়। প্রবাহীর এ বিভিন্ন স্তরের ঘর্ষণকেই সান্দ্রতা বলা হয় ।
Friction and Viscosity
ঘর্ষণ যেমন দুটি কঠিন পদার্থের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়, সান্দ্রতা তেমনি প্রবাহীর দুটি স্তরের আপেক্ষিক গতিতে বাধা দেয় এবং গতি ব্যাহত করতে চেষ্টা করে। সান্দ্রতাকে তাই অন্তস্থ ঘর্ষণও বলা হয়। স্থির প্রবাহীর বেলায় সান্দ্ৰতা বল ক্রিয়া করে না, প্রবাহী গতিশীল হলেই সান্দ্রতা বল ক্রিয়া করে। ঘর্ষণ বল ও সান্দ্রতা বলের মধ্যে পার্থক্য হলো ঘর্ষণ বলের মান স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না, সান্দ্রতা বলের মান প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। এ ছাড়াও, সান্দ্রতা বল প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের বেগ ও স্থির তল থেকে এর দূরত্বের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন তরলের সান্দ্রতা বিভিন্ন রকম। তেল, দুধ ও আলকাতরার মধ্যে আলকাতরার সান্দ্রতা সবচেয়ে বেশি; আমরা পূর্বেই বলেছি পানির তুলনায় মধুর সান্দ্রতা বেশি ।
প্রবাহী পদার্থের পাশাপাশি সমান্তরাল দুটি স্তরের আপেক্ষিক গতির দরুন সৃষ্ট ঘর্ষণ বলের জন্য সান্দ্র প্রভাব দেখা দেয় । আমরা জানি, যে ধর্মের ফলে প্রবাহী এর বিভিন্ন স্তরের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয় তাকে ঐ প্রবাহীর সান্দ্রতা বলে ।
স্তরায়িত প্রবাহে রয়েছে এমন একটি প্রবাহী বিবেচনা করা যাক। এই প্রবাহী পদার্থের এমন দুটি সমান্তরাল স্তর বিবেচনা করা যাক, যাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রফল A এবং এরা পরস্পর থেকে dy দূরত্বে রয়েছে (চিত্র : ৭.১৬)। এই স্তর দুটির বেগ যথাক্রমে v এবং v + dv। তাহলে দূরত্বের সাপেক্ষে বেগের অন্তরক হলো । একে বেগের নতি (velocity gradient) বলে ।
প্রবাহী স্তর দুটির মধ্যে বেগের পার্থক্য থাকায় প্রবাহীর সান্দ্রতার জন্য তাদের মধ্যে প্রবাহের বিপরীত দিকে একটি বল ক্রিয়া করে। এ বলের মান সম্পর্কে নিউটন একটি সূত্র দিয়েছেন। এটি সান্দ্রতা সংক্রান্ত নিউটনের সূত্র নামে পরিচিত।
অর্থাৎ
এখানে হলো একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান প্রবাহীর প্রকৃতি এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। একে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রবাহীর সান্দ্রতা গুণাঙ্ক বা সান্দ্রতা সহগ বলা হয় ।
(7.19) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, A = 1 একক এবং y = 1 একক হলে
F= × 1 × 1
অর্থাৎ = F হয়। এ থেকে বলা যায় যে,
সান্দ্রতা সহগ প্রবাহীর সান্দ্রতার পরিমাপ বিশেষ। কোনো প্রবাহীর সান্দ্রতা সহগ বলতে প্রবাহীটি যে সান্দ্র প্রভাব প্রদর্শন করে তার পরিমাপকে বোঝায়। সান্দ্রতা সহগ যত বেশি প্রবাহীটি তত সান্দ্র কক্ষ তাপমাত্রায় গ্লিসারিনের সান্দ্রতা সহগ পানির চেয়ে 103 গুণ বেশি। নিউটনের সূত্র তথা (7.19) সমীকরণ সকল গ্যাসের জন্য এবং অনেক তরলের জন্য খাটে। যে সব তরলের জন্য এই সূত্র খাটে তাদের বলা হয় নিউটনীয় তরল। পানি একটি নিউটনীয় তরল। অ-নিউটনীয় তরলের
জন্য η এর কোনো ধ্রুব মান নেই। প্রকৃতপক্ষে, এসব তরলের সান্দ্রতা সহগ নেই। এরকম একটি তরল হলো তেল রং (oil paint) ।
(7.19) সমীকরণ থেকে দেখা যায়,
বা, η = বল/ক্ষেত্রফল Xবেগ/দূরত্ব
সুতরাং η এর মাত্রা হবে উপরিউক্ত সমীকরণের ডানপাশের রাশিগুলোর মাত্রা অর্থাৎ
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mfenced open="[" close="]"><mi>η</mi></mfenced><mo>=</mo><mfrac><mrow><mi>M</mi><mi>L</mi><msup><mi>T</mi><mrow><mo>−</mo><mn>2</mn></mrow></msup></mrow><mrow><msup><mi>L</mi><mn>2</mn></msup><mfrac><mrow><mi>L</mi><msup><mi>T</mi><mrow><mo>−</mo><mn>1</mn></mrow></msup></mrow><mi>L</mi></mfrac></mrow></mfrac><mo>=</mo><mi>M</mi><msup><mi>L</mi><mrow><mo>−</mo><mn>1</mn></mrow></msup><msup><mi>T</mi><mrow><mo>−</mo><mn>1</mn></mrow></msup></math>
(7.19) সমীকরণ থেকে পুনরায় পাওয়া যায়,
এই সমীকরণের ডানপাশের রাশিগুলোর একক বসালে η এর এস আই একক পাওয়া যায় । এ একক হলো
অর্থাৎ N sm -2 বা, Pas
বিজ্ঞানী পয়সুলীর নামানুসারে সান্দ্রতাঙ্কের আর একটি একক হচ্ছে পয়েস (poise) 1 N s m-2 = 10 poise
পানির সান্দ্রতা সহগ 103 N s m-2 বলতে বোঝায় 1 m-2 ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট পানির দুটি স্তর পরস্পর থেকে 1m দূরত্বে অবস্থিত হলে এদের ভেতর 1 ms-1 আপেক্ষিক বেগ বজায় রাখতে 10-3 N বলের প্রয়োজন হয়।
কোনো সান্দ্র মাধ্যম (তরল বা গ্যাস) দিয়ে যদি কোনো বস্তু গতিশীল হয় তাহলে এটি এর স্পর্শে থাকা প্রবাহী পদার্থের স্তরগুলোকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। এতে প্রবাহীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে আপেক্ষিক গতির সৃষ্টি হয়। ফলে গতিশীল বস্তুটির উপর একটি সান্দ্র বল কাজ করে। এ বল বস্তুর গতিকে মন্থর করতে চায় ।
স্টোক্স প্রমাণ করেন যে, ব্যাসার্ধের কোনো গোলক η সান্দ্রতার তরলের ভেতর দিয়ে চলার সময় বেগ প্রাপ্ত হলে তরলের সান্দ্রতার জন্য গোলকের গতিকে বাধাদানকারী বল F হবে,
…. (7.22)
অর্থাৎ এ বল প্রবাহীর সান্দ্রতাঙ্কের সমানুপাতিক, গোলকের বেগের সমানুপাতিক এবং গোলকের ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক । এ বল গোলকটি যে দিকে গতিশীল তার বিপরীত দিকে ক্রিয়া করবে। একে স্টোকসের সূত্র বলে। কোনো বস্তু যদি অভিকর্ষের প্রভাবে কোনো তরলের মধ্য দিয়ে পতিত হয়, তাহলেও স্টোকসের সূত্র ( 7.22) প্রযোজ্য হয়। তখন η হয় তরলের সান্দ্রতায়।
উল্লেখযোগ্য যে স্টোকসের সূত্র শুধু অসীম বিস্তৃতির (infinite extent ) প্রবাহীর বেলায় খাটে। যদি গোলকটি অত্যন্ত দ্রুত চলতে থাকে এবং এর ফলে প্রবাহীর প্রবাহ স্রোতরেখা গতি না হয় তাহলে এ সূত্র ভালো খাটবে না।
কোনো কঠিন পদার্থকে কোনো তরলে ডুবালে দেখা যায় যে, তরল পদার্থ যেখানে কঠিন পদার্থটিকে স্পর্শ করে সেখানে তরল পদার্থের মুক্ততল বা উপরিতল অন্যান্য জায়গার মতো অনুভূমিক হয় না বরং তরলের মুক্ত তল হয় বেঁকে খানিকটা উপর ওঠে যায় অথবা খানিকটা নিচে নেমে যায়। দেখা গেছে, যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় যেমন (পানি ও কাচ) সেক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা উপর ওঠে যায় (চিত্র : ৭.২১ক)। পক্ষান্তরে যে সকল তরল কঠিন পদার্থকে ভিজায় না যেমন (পারদ ও কাচ) তাদের ক্ষেত্রে তরলতল খানিকটা নিচে নেমে যায় বা অবনমিত হয় (চিত্র : ৭.২১)।
কঠিন ও তরলের স্পর্শ বিন্দু C থেকে বক্র তরল তলে স্পর্শক CA টানলে ঐ স্পর্শক কঠিনের পৃষ্ঠ CB-এর সাথে তরলের ভেতরে যে কোণ উৎপন্ন করে তাই স্পর্শ কোণ । ৭-২১ চিত্রে হচ্ছে স্পর্শ কোণ।
সাধারণত: যে সব তরলের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে কম সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ হয় অর্থাৎ 90° এর কম হয়। কাচ ও বিশুদ্ধ পানির বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 8° রূপা ও বিশুদ্ধ পানির মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় 90°। যে সব তরল পদার্থের ঘনত্ব কঠিন পদার্থের ঘনত্বের চেয়ে বেশি সেসব তরল পদার্থ সাধারণত কঠিন পদার্থকে ভেজায় না এবং তাদের বেলায় স্পর্শ কোণ স্কুল কোণ অর্থাৎ 90°এর চেয়ে বেশি হয়। কাচ ও বিশুদ্ধ পারদের বেলায় স্পর্শ কোণের মান প্রায় 139°।
১. কঠিন ও তরলের প্রকৃতির উপর।
২. তরলের মুক্ততলের উপরস্থ মাধ্যমের উপর। যেমন পারদের উপর বায়ু থাকলে পারদ ও কাচের স্পর্শ কোণ যা হবে পারদের উপর পানি থাকলে স্পর্শ কোণ তা থেকে আলাদা হবে।
৩. কঠিন ও তরল পদার্থের বিশুদ্ধতার উপর। তরল যদি বিশুদ্ধ না হয় বা কঠিন পদার্থের পৃষ্ঠে কোনো কিছু থাকলে স্পর্শ কোণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানি ও পরিষ্কার কাচের মধ্যকার স্পর্শ কোণ প্রায় শূন্য। কিন্তু কাচে সামান্য পরিমাণেও তৈলাক্ত পদার্থ থাকলে স্পর্শ কোণের মান বৃদ্ধি পায়।
অতি সূক্ষ্ম ও সুষম ছিদ্রবিশিষ্ট নলকে কৈশিক নল (capillary tube) বলে। কোনো কৈশিক কাচ নলের এক প্রান্ত তরলের মধ্যে খাড়া করে ডুবালে নলের ভেতর কিছু তরল তরলের মুক্ত তল থেকে উপরে ওঠে যায় বা নিচে নেমে আসে। যেসব তরল (যেমন পানি) কাচ নলকে ভিজিয়ে দেয় তাদের বেলায় নলের ভেতরকার তরলের তল (চিত্র : ৭.২২ক)
পাত্রের তরলের মুক্ততলের চেয়ে উপরে ওঠে যায় অর্থাৎ তরলের ঊর্ধ্বারোহণ বা অধিক্ষেপ হয়। যেসব তরল (যেমন পারদ) কাচ নলকে ভিজায় না তাদের বেলায় কাচ নলের ভেতরকার তরল স্তম্ভের উপরিতল পাত্রের তরলের (চিত্র: ৭.২২খ)
মুক্ততলের চেয়ে নিচে নেমে আসে অর্থাৎ তরলের অবনমন বা অবক্ষেপ হয়। কৈশিক নলে তরলের এরকম অধিক্ষেপ বা অবক্ষেপকে কৈশিকতা বলে। তরলের পৃষ্ঠটানের জন্য এরূপ হয়ে থাকে। অধিক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলের উপরিতল অবতল থাকে এবং অবক্ষেপের বেলায় নলের ভেতর তরলের উপরিতল উত্তল থাকে। আসঞ্জন ও সংসক্তি বলের আপেক্ষিক মানের ওপর নির্ভর করে নলের ভেতরকার তরলের উপরিতলের বক্রতা কেমন হবে। আসঞ্জন বা সংসক্তি বলের মান কতটা হবে তা তরল ও কঠিন পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভিজিয়ে দেয় (যেমন পানি ও কাচ) তার আসন বল, যে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজায় না (যেমন পারদ ও কাচ) তার আসঞ্জন বলের চেয়ে অনেক বেশি। আবার পানির সংসক্তি বল পারদের সংসক্তি বলের চেয়ে অনেক কম দেখে গেছে,
(i) সংসক্তি বল = আসঞ্জন বল হলে কৈশিক নলে তরলের অবক্ষেপ বা অধিক্ষেপ হয় না, তরলের মুক্ত তল অনুভূমিক থাকে এবং স্পর্শ কোণ শূন্য অর্থাৎ = 0° হয়।
(ii) সংসক্তি বল > আসঞ্জন বল হলে কৈশিক বলে তরলের অবক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল উত্তল হয় এবং স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ অর্থাৎ ৪> 90° হয়।
(iii) সংসক্তি বল < আসঞ্জন বল হলে কৈশিক বলে তরলের অধিক্ষেপ হয়, তরলের মুক্ততল অবতল হয় এবং স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ অর্থাৎ < 90° হয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে, পানির উপর দিয়ে মশা, মাছি বা অন্য কোনো পোকামাকড় হাঁটছে। এদের পা পানিতে ডুবে যাচ্ছে না। মনে হয় পানির উপর যেন একটি পাতলা পর্দা রয়েছে এবং এই পর্দার উপর দিয়ে পোকামাকড় চলাফেরা করছে। ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, যেখানে পোকামাকড়ের পা পড়ছে, সেখানে পানির পৃষ্ঠ একটু অবনমিত হচ্ছে। এটা সম্ভব হয় পানির পৃষ্ঠটানের কারণে। পৃষ্ঠটানের দরুন পানি বা যেকোনো তরলের পৃষ্ঠ বা মুক্ততল টানা স্থিতিস্থাপক পর্দার মতো আচরণ করে এবং ক্ষেত্রফল সঙ্কুচিত হতে চায় ।
সাবান পানির পৃষ্ঠটান কমিয়ে দেয়। সাবানের দ্রবণের পৃষ্ঠটান পানির পৃষ্ঠটানের চেয়ে কম। সুতরাং এক ফোটা সাবানের দ্রবণ পানির ফোঁটার চেয়ে বেশি পৃষ্ঠতল বা ক্ষেত্র দখল করে। সুতরাং এটা কাপড়ের বেশি এলাকা ভিজিয়ে দেয় । সুতরাং সাবানের দ্রবণ কাপড়ের যেসব সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে প্রবেশ করে সেখানে পানি প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সাবানের দ্রবণে কাপড় থেকে ময়লা বের করে আনতে পারে। সুতরাং সাবানের দ্রবণ পানির চেয়ে উত্তম উপায়ে কাপড় পরিষ্কার করতে পারে। সাবানের দ্রবণকে গরম করলে পানির পৃষ্ঠটান আরো কমে যায় ফলে কাপড় আরো বেশি। পরিষ্কার হয়।
উদ্ভিদ বা গাছের গোড়ায় পানি দিলে সে পানি গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছে যায়। এর কারণ হলো : পানির পৃষ্ঠটানের কারণে গাছের কাণ্ডে অসংখ্য কৈশিক নলের ভিতর দিয়ে পানি উপরের দিকে উঠে এবং গাছের ডালপালা ও পাতায় পৌঁছায়। এ প্রক্রিয়ায় অসমোসীয় (osmotic) চাপেরও আংশিক ভূমিকা থাকে।
৪। তরলের পৃষ্ঠে সুই ভেসে থাকা পৃষ্ঠটান নিয়ে আলোচনার সময় আমরা বলেছি যে, কোনো সুইকে একটি টিস্যু পেপারের উপরে রেখে পানির মুক্ততলে রাখলে টিস্যু পেপার ভিজে ডুবে যায় কিন্তু সুইটি ভাসতে থাকে। এর কারণ হলো- পানিতে যেখানে সুইটি রয়েছে তার নিচে পানির পৃষ্ঠ কিছুটা অবনমিত হচ্ছে। ফলে পৃষ্ঠের ঐ স্থানটা অনুভূমিক থাকে না বরং পৃষ্ঠটানের জন্য এ বল অবনমিত পানি পৃষ্ঠের সাথে তির্যকভাবে স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে। পৃষ্ঠটানজনিত এ তির্যকভাবে (ক্রিয়াশীল বলের উল্লম্ব উপাংশ সুই-এর ওজনকে প্রশমিত করে, ফলে সুইটি না ডুবে সাম্যাবস্থায় ভেসে থাকে।
ছাতার কাপড় বা তাবুর কাপড় বা রেইন কোর্টের কাপড়ে খুব সুক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যার মধ্য দিয়ে বাতাস প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বৃষ্টির পানির ফোঁটা প্রবেশ করতে পারে না— কাপড়ের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়।
কঠিন ও তরলের মধ্যকার স্পর্শ কোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে কম হলে তরল পদার্থ ঐ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে। আর যদি স্পর্শকোণ স্থূলকোণ অর্থাৎ 90° এর চেয়ে বেশি হয়। তাহলে তরল পদার্থ কঠিন পদার্থকে ভেজাবে না। কচুপাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ 90° এর চেয়ে বেশি হওয়ায় পানি কচু পাতাকে ভেজাতে পারে না। পক্ষান্তরে আম পাতা ও পানির মধ্যকার স্পর্শকোণ সূক্ষ্মকোণ হওয়ায় পানি আম পাতাকে ভেজায়।
আমরা জানি যে, পানির সাথে কাচের স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম কোণ ও পানির সাথে পারদের স্পর্শ কোণ স্থুল কোণ। এ ঘটনা পৃষ্ঠটানের কারণেই ঘটে থাকে। কাচের সাথে স্পর্শ কোণ 6 এর মান স্থল কোণে রাখার জন্য পারদকে ফোঁটার আকার ধারণ করতে হয় এবং কাচের সাথে স্পর্শ কোণ সূক্ষ্ম করার জন্য পানিকে ছড়িয়ে পড়তে হয়।
তরলের পৃষ্ঠটান ধর্ম ব্যবহার করে অশান্ত সমুদ্রকে অনেকটা শান্ত করা যায়। সমুদ্রে খুব ঢেউ থাকলে অনেক সময় তেল ঢেলে দেয়া হয় শান্ত করার জন্য। বাতাস জোরে প্রবাহিত হওয়ার সময় পানির ওপর ভাসমান তেল ঢেউ-এর সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং পেছনে পরিষ্কার পানি থেকে যায়। পরিষ্কার পানির পৃষ্ঠটান তেল মিশ্রিত পানির চেয়ে বেশি হওয়ায় সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিকের পৃষ্ঠটান বেশি হয়। এ বর্ধিত পৃষ্ঠটান পেছনের দিকে বড় ঢেউ সৃষ্টিতে হঠাৎ বাধা দেয়, ফলে সমুদ্র শান্ত হয়ে যায়।
তরল ও বায়বীয় পদার্থের সান্দ্রতার উপর তাপমাত্রা ও চাপ উভয়ের প্রভাবে ভিন্নতা রয়েছে। তাই আমরা তরল ও গ্যাসের জন্য তাপমাত্রার প্রভাব বা চাপের প্রভাব পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করব।
(ক) তরলের সান্দ্রতা : বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে তরলের সান্দ্রতার উপর তাপমাত্রার প্রভাব পাওয়া যায়। দেখা গেছে যে, 10°C তাপমাত্রায় পানির সান্দ্রতা সহগের যে মান পাওয়া যায়, 80°C তাপমাত্রায় সে মান হয় এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু তরলের সান্দ্রতা সহগের সাথে তাপমাত্রার সম্পর্কে কোনো সঠিক সূত্র পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন সূত্র দিয়েছেন। তাপমাত্রার সাথে সান্দ্রতা সহগের সম্পর্কসূচক একটি সমীকরণ হলো :
এখানে η হলো তরলের সান্দ্রতা সহগ, T তরলের কেলভিন তাপমাত্রা এবং A ও B ধ্রুবক।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্যাসের সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। গ্যাসের সান্দ্রতা সহগ তার কেলভিন তাপমাত্রার বর্গমূলের সমানুপাতিক ।
:- (7.21)
তাপমাত্রা বৃদ্ধি : তরল ও গ্যাসের সান্দ্রতা হ্রাস বৃদ্ধির বৈপরীত্য আমরা জানি যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তরলের সান্দ্রতা হ্রাস পায়। 10° C তাপমাত্রায় পানির যে সান্দ্রতা 80° C
তাপমাত্রায় তা কমে এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যায়; কিন্তু অপরদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে গ্যাসের সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। কেন এই বৈপরীত্য ?
আমরা জানি যে, তরল ও গ্যাস উভয়ই অণু দিয়ে গড়া। আণবিক তত্ত্ব থেকে আমরা তাই তরল ও গ্যাসের সান্দ্রতা বৃদ্ধি ও হ্রাসের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা করতে পারি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তরলের অণুগুলো তাপ থেকে শক্তি গ্রহণ করে বেশি শক্তি পায় এবং এদের গতি বেড়ে যায়। এতে অণুগুলোর গড় মুক্ত পথ বৃদ্ধি পায় ফলে এদের মধ্যে ঘর্ষণ কম হয়। গড় মুক্ত পথ বৃদ্ধির ফলে তরলের স্তরের আপেক্ষিক বাধা কমে যায়। ফলে তরলের সান্দ্রতা হ্রাস পায় ।
অপরদিকে গ্যাসের অণুগুলো থাকে তরলের তুলনায় অনেক আলগাভাবে বাঁধা। এরা সব সময় এলোমেলো গতিতে থাকে । তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এদের ইতস্তত গতি অত্যন্ত বেড়ে যায়। ধীর গতির স্তরের কিছু অণু দ্রুত গতির স্তরে যায়। ফলে দ্রুতগতি স্তরের অণুগুলোর গড় দ্রুতি হ্রাস পায়। আবার এই ইতস্তত গতির ফলে দ্রুত গতি স্তরের কিছু অণু ধীর গতির স্তরে চলে যায়। এতে ধীর গতি স্তরের অণুগুলোর গড় দ্রুতি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে দুই স্তরের মধ্যকার আপেক্ষিক গতি হ্রাস পায় তথা সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়।
(ক) তরলের সান্দ্রতা : চাপ বৃদ্ধির সাথে তরলের সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। খনিজ তেলের ক্ষেত্রে সান্দ্রতার উপর চাপের প্রভাব খুবই লক্ষ্যণীয়।
(খ) গ্যাসের সান্দ্রতা : বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল গ্যাসের গতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে বলেন যে, গ্যাসের সান্দ্রতার উপর চাপের কোনো প্রভাব নেই এবং একথা চাপের বিস্তৃত পাল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে নিম্নচাপের ক্ষেত্রে এর কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।
স্টোকসের সূত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনো বস্তুর উপর বাধাদানকারী বল এর বেগের সমানুপাতিক। যদি y = 0 হয়, F= 0 এবং v বাড়লে F বাড়ে। এ থেকে বলা যায় যে, কোনো সান্দ্ৰপ্র বাহী দিয়ে যদি কোনো গোলক অভিকর্ষের প্রভাবে পতিত হয় তাহলে আদিতে অভিকর্ষজ ত্বরণের জন্য এর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু যুগপৎভাবে এর উপর বাধাদানকারী বল F বৃদ্ধি পায় ফলে বস্তুটির নিট ত্বরণ কমতে থাকে। এক সময় বস্তুটির নিট ত্বরণ শূন্য হয়। বস্তুটি তখন ধ্রুব বেগ নিয়ে পতিত হতে থাকে। এই বেগকে বলা হয় অন্ত্যবেগ বা প্রান্তিক বেগ ।
যেমন বায়ুর ভিতর দিয়ে শিলার পতন, নদীর বা সমুদ্রের পানিতে ভারী কঠিন বস্তুর পতনে একই ঘটনা ঘটে। এগুলোর পড়ার সময় এক সময় নিট ত্বরণ শূন্য হয় এবং সমবেগে সান্দ্র তরল দিয়ে পড়তে থাকে।
অস্ত্য বেগ v এর জন্য আমরা একটি রাশিমালা প্রতিপাদন করতে চাই।
মনে করা যাক, কোনো সান্দ্র তরলের ভেতর একটি গোলক পতিত হচ্ছে (চিত্র : ৭.১৭)। গোলকের উপর ক্রিয়াশীল বল হলো
(ক) নিম্নমুখী বল তথা গোলকের ওজন W
(খ) ঊর্ধ্বমুখী বল তথা প্লবতা U এবং
(গ) ঊর্ধ্বমুখী বাধাদানকারী বল তথা সান্দ্র পশ্চাৎটান F
আদিতে নিম্নমুখী বল W ঊর্ধ্বমুখী বল U + F এর চেয়ে বড়। ফলে গোলকটির নিম্নমুখী ত্বরণ থাকে। গোলকটির বেগ বৃদ্ধির সাথে সান্দ্র পশ্চাৎটানও বৃদ্ধি পায়, ফলে U + F এক সময় W এর সমান হয়। তখন গোলকটি নিচের দিকে চলতে থাকে এবং এর উপর নিট বল কাজ করে না এবং এর বেগ একটি ধ্রুব সর্বোচ্চ মান লাভ করে, একে বলা হয় অন্ত্য বেগ v।
এখন,
গোলকের ভর m , ব্যাসার্ধ, আয়তন V এবং উপাদানের ঘনত্ব p. হলে, এর ওজন
তরলের ঘনত্ব হলে, প্লবতা
U= অপসারিত তরলের ওজন
প্রবাহীর সান্দ্রতা সহগ η হলে, স্টোকসের সূত্রানুসারে সান্দ্র পশ্চাৎটান
গোলকটি অন্ত্যবেগ প্রাপ্ত হলে F+U = W
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই পানির মধ্যে বায়ুর বুদবুদ উপরে ওঠে। এক্ষেত্রে অন্ত্য বেগের সমীকরণ হলো
যেখানে P : পানির ঘনত্ব এবং ps = বায়ুর বুদবুদের ঘনত্ব
যেহেতু বায়ু বুদবুদের ঘনত্ব ps, পানির ঘনত্বের তুলনায় অনেক কম (ps, << pf), তাই ps কে উপেক্ষা করে উপরিউক্ত সমীকরণকে বায়ু বুদবুদের জন্য লেখা যায়,
আরও দেখুন...